রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল : বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করছে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রাফিক সার্জেন্ট/পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সড়কের বিশৃঙ্খলা এড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) খাইরুল আলম সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। ট্রাফিক পুলিশের আইন না মানলে আরোহীকে আটক করে মামলা দেয়ার মত দৃষ্টান্তও সৃষ্টি করেছেন তিনি। এমন উদ্যোগ বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ গঠন হওয়ার পরে এই প্রথম বলে জানান অনেকে। বিষয়টি বরিশালের যানবাহন বা মোটরযান চালকদের ভাবিয়ে তুলছে। একারণেই যানবাহন বা মোটরযান চালকরা অনেকটা সাবধানতা অবলম্বন করেই রাস্তায় গাড়ি চালান।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার বরিশাল শহরের সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং নিজেদের আরও মেলে ধরতে নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ। এখন থেকে এলাকা বা মহল্লাভিত্তিক জোরালো অভিযান চালিয়ে অবৈধ যানবাহন ধরতে কাজ করবে এই বিভাগটি। নতুন এই উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনিদের্শনাও দেয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে আগামী ২/৪ দিনের মধ্যেই এলাকাভিত্তিক মাঠে নামবে একাধিক টিম। ট্রাফিক পুলিশের ভাষ্যমতে, বিগত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে শহরে ব্যাপক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এই দুইমাসে ৭ হাজার ১৪৫টি মামলা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩২১টি অবৈধ যানবাহন আটক করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। কিন্তু তারপরেও অবৈধ যানবাহন চলাচল পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রতিনিয়তই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।
এই বিষয়টিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) খাইরুল আলম মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর নাখোশ। কারণ, তিনি চাইছেন উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বরিশাল শহর থেকে অবৈধ যানবাহন দ্রুত সরিয়ে ফেলতে। মূলত এই কারণে বেশ কয়েকজন ইন্সপেক্টরকে এখন থেকে এলাকাভিত্তিক ডিউটি দিয়ে মাঠে নামিয়ে দিতে চাইছেন তিনি। অবশ্য ডিসি খাইরুল আলম অনেকটা স্বচ্ছ মনের মানুষ হওয়ায় তার এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েই অপরাপর সদস্যরাও মাঠপর্যায়ে গুরুত্বের সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি জানিয়েছেন। কারণ, পুলিশ কর্মকর্তা খাইরুল আলমের যোগদানের সময়সীমা বেশিদিন না হলেও যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের ধারাবাহিকতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কমতি নেই। যে কারণে পুলিশ কমিশনারও ট্রাফিক পুলিশের প্রতিটি উদ্যোগকে সমর্থন করে পাশে থাকছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বরিশাল ট্রাফিক পুলিশ অফিস সূত্র জানিয়েছে, খাইরুল আলম বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদানের পরপরই শহরের শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। এই কর্মকর্তার নির্দেশনার আলোকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা গত আগস্ট মাসে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ২৯টি মামলা করেন। পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে ২৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৫০টাকা। এসব মামলার মধ্যে ৩ হাজার ৮৬৪টি নিষ্পত্তি করে ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪০ টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা করা হয়েছে। একইভাবে পরবর্তী মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ১১৬টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করে ২৩ লাখ ১২ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একই মাসে পুরাতনসহ ৪ হাজার ২২৮টি মামলা নিষ্পত্তি করে ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকা জরিমানা উত্তোলন করা হয়। ট্রাফিক পুলিশের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাফিক পুলিশ ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করলেও আদায় হয়েছে বেশি। বিগতদিনের মামলার জরিমানাসহ এ দুই মাসে আদায়ের পরিমাণ ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮১৫ টাকা।
যদিও ভেতরকার একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন যানবাহনে জরিমানার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে শহরের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়টি নিয়েই বেশিমাত্রায় ভাবছে ডিসি ট্রাফিক। যে কারণে তিনি অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে এলাকাভিত্তিক অভিযান জোরালো করতে চাইছেন।
এই বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) খাইরুল আলমের অভিব্যক্তি হচ্ছে, অভিযান আগে থেকেই জোরদার ছিল। বর্তমানে এলাকাভিত্তিক অভিযানের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা গেলে সড়কে শৃঙ্খলার পাশাপাশি দুর্ঘটনাও কমে আসবে। মূলত এই কারণেই বেশ কয়েকজন অফিসারকে নির্দেশনা দিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিটি সড়ককে নিরাপদ রাখার জন্য ট্রাফিক বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply